The Poet's Pen 20s Logo

Sunday, February 20, 2022

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, পর্ব ১

    @photo from Pixabay

ইতিহাস বনাম ইতিকথা

যে কোন সাহিত্যের সঙ্গে তার ইতিহাস কিংবা ইতিকথার গুরুত্ব অনেক। যেমন শরীরের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন। কোন ব্যাক্তির নামের সঙ্গে সঙ্গে তার ঠিকানার মাধ্যমে যেমন তার জীবনের অনেকাংশ জানা সম্ভব। সাহিত্যের ইতিহাসও সেভাবেই আমাদের কোন সাহিত্যের সূচনা, বিবর্তন ও শিল্পকে আয়ত্ত করতে সাহায্য করে।

    'ইতিকথা' কিংবা 'ইতিহাস' শব্দ দুটিকে অতীতে আলাদাভাবে দেখা হলেও আজ ইতিকথার অর্থ হিসেবে  সরাসরি ইতিহাস অর্থেই বোঝানো হয়।  অতীতে ইতিকথার অর্থ ছিল "অর্থশূন্য বাক্য, অশ্রদ্ধেয় বাক্য, নষ্টবাক্য"। আবার কেউ কেউ বলেছেন "অতিকথা"।সুতরাং, ইতিকথা আর ইতিহাসের কোন সঠিক সম্পর্ক ছিল না তখন। তবে আজ ইতিহাস আর ইতিকথা শব্দ দুটি অর্থে মিশে গেছে ন্যায্য বোধগম্যতার মধ্যে। অন্যদিকে ইতিহাস বলতে বোঝায় কোন ঘটনা পুঞ্জের ধারাবাহিক বিবরণ। যেখানে থাকবে সমাজ, মানুসষ, সৃষ্টি, ধ্বংস, আবিস্কার, নতুনকে সংকেত দেবার মত কিছু শক্তি। 'The Shorter Oxford English Dictionary' এর মতে ইতিহাস হল, "History, in its broadest scene, is the story of man's past. More specially it means the record of that past, not only in chronicles and treaties on the past, but, in all shorts of forms."

    তাই এখন যদি আমরা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বা ইতিকথা খুঁজি সেখানে অবশ্যই পাব, অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাপুঞ্জ, যাকে সংক্ষেপে বলে ইতিহাস। আবার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বলতে কেবল এক তরফা ইতিহাস কিংবা এক তরফা সাহিত্যকেই বোঝাবেনা; সাহিত্য ও সমসাময়িক ইতিহাসই হল সাহিত্যের ইতিহাস। 

    কোন সমাজের বা ভাষার ইতিহাস এক দুই বা দিনে, কিংবা রাতের ফুলের মত গড়ে ওঠে না। এ এক ধীর ও ক্রম সংযোজনশীল প্রক্রিয়া। বছরের পর বছর, যুগ যুগ ধরে কোন এক সমাজ কিংবা ভাষার আবির্ভাব ঘটে, যদিও সেই সূচনা একিই যায়গায় থেমে থাকেনা কখনো। বাংলা ভাষার ইতিহাসের ক্ষেত্রেও একই ইতিবৃত্ত ধরা পড়ে। আদি কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলা ভাষার বিবর্তন ঘটেছে অনেক। সেই প্রাচীন আর্য যুগ থেকে শুরু করে তুর্কি, মুঘল আক্রমন। তারপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শোষণ শাসন। সবই ভারতের বিস্তীর্ণ ভূমিকে বিপর্যস্ত করে তোলে। একইভাবে বাংলার সমাজ সংস্কৃতি ও ইতিহাসকেও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। 

    সংস্কৃত যে বাংলা ভাষার উৎস সে বিসয়ে কোন সন্ধেয় নেই, প্রাকৃত মাগধী অপভ্রংশ  থেকেই বাংলা ভাষার সূচনা। তবে কিভাবে আর্য  সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষা এল সেটা জানা খুবই জরুরি। 

    এখন আমরা একটু সংক্ষেপে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে জানব। প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার নিদর্শন পাওয়া যায় ঋগ্বেদ ও পরবর্তী বেদ ও অন্যান্য ব্রাহ্মণাদির ভাষার গ্রন্থে যেগুলির রচনা আনুমানিক খ্রিঃ পূঃ ১৫০০ থেকে খ্রিঃ পূঃ ৬০০। সংস্কৃত ভাষার ব্যাবহার আনুমানিক ৬০০ খ্রিঃ পূঃ থেকে। এরপর সংস্কৃত থেকে পালি ভাষার আবির্ভাব যার নিদর্শন পাওয়া যায় অশোক যুগের শিলালেখ ও অন্যান্য পালি লিপি থেকে, আনুমানিক সময় খ্রিঃ পূঃ ৬০০ থেকে ২০০ অব্দ পর্যন্ত। পরবর্তী প্রাকৃত ভাষা যার নিদর্শন পাওয়া যায় বিভিন্ন নাটকীয় প্রাকৃত, শৌরসেনী, মহারাষ্ট্রী, মাগধী ও জৈন-অর্ধমাগধী পুস্তকে আনুমানিক ২০০ খ্রিঃ  থেকে ৬০০ খ্রিঃ। পরে পশ্চিমা বা শৌরসেনী অপভ্রংশ নিদর্শন  থেকে অপভ্রংশ ভাষা আনুমানিক সময় ৬০০ খ্রিঃ  থেকে ৭৫০ খ্রিঃ। অবশেষে ৭৫০ খ্রিঃ থেকে যে সব ভাষার আবির্ভাব যেমন বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া, মৈথিলী, অসমীয়া ইত্যাদি সব ভাষার মাতৃ ভাষা অর্থাৎ উৎস হল উত্তরবর্তি অপভ্রংশ ভাষা।  

    বিভিন্ন সময়ের প্রভাব ও পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে আবার তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। 

    ১। বাংলা সাহিত্যের প্রথম পর্যায় অর্থাৎ প্রাক-তুর্কি আক্রমণের যুগ। এই যুগের আনুমানিক কাল ৭৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ।

    ২। বাংলা সাহিত্যের মধ্য পর্যায় অর্থাৎ তুর্কি আক্রমণের-পরবর্তী যুগ। এই যুগের আনুমানিক সময় ১২০১ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ। 

    ৩। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক পর্যায় অর্থাৎ ইউরোপ-প্রভাবিত যুগ। এই যুগের সময়কাল আনুমানিক ১৮০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত।   

এই পর্যায়গুলির ধারাবাহিক পাঠের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সময়ের সমাজ, জীবন, সংস্কৃতি, ও বাংলা সাহিত্যের ক্রম পরিবর্তনের সাথে সাথে বিন্যাসের ইতিহাস জানতে পারব।

No comments:

Post a Comment