Essay; Tapas Sarkar;
ফেইসবুকে স্ক্রল করছিলাম। খচ খচ করে এক গাঁদা রাজনৈতিক বিতন্ডা, বার্থডে উইসেস, খাদ্যপ্রনালির ডেইলি আপডেটস, আর ঘাড়-কোমড় বাঁকা করা কোথাও নিতম্ব কোথাও শক্তিশালী ভাঁজ যুক্ত প্রচুর পোষ্ট দেখলাম। হায় রে অভিরুচির কি আধুনিক করমর্দন! যাইহোক, তবুও এইসব পোস্টগুলি থেকে শেখার আছে অনেক, বিশেষ করে Do's আর Don'ts গুলি। এই শিক্ষার অভিজ্ঞতা সমাজের কায়দায় চলতে আর ভদ্র মানুষ সেজে হাঁটতে বিভিন্ন পরিবেশের মোকাবিলায় পড়লে সেই পরিস্থিতির সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানুষিক কেলেঙ্কারিগুলি সর্বির্ভাবে পর্যালোচনা করতে সাহায্য করে। তাই অনেকটা নিরপেক্ষ চোখে ফেবুর টাইমলাইন স্ক্রল করতে থাকি, বেশ ভালই লাগে। দেখি চ্যাট বক্সের আইকনে দুটো মেসেজ এসেছে। কিন্তু তাতে বেশি মনোযোগ দিতে পারলামনা, কারণ ফেবুর চ্যাট-এ আমার তেমন আকর্ষণ নেই। এরপর, স্ক্রল করতে করতে একটি পোস্ট দেখলাম, পোস্টটি এক পরিচিতের। যদিও একই কলেজ থেকে আমাদের গ্রাজুয়েট, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের তেমন বাক্যালাপ নেই, তবু খুব কম আমি উনার পোস্ট এড়িয়ে যাই, কারণ একটু ব্যতিক্রমী রকমের পোস্ট উনার। হ্যা ব্যতিক্রম কারণ পোস্টগুলোতে animal rights, voice for the voiceless, প্রাণের অধিকারের কথা বলা হয়। তাছাড়া আজকাল এসব বিষয়ের ছড়া-ছড়ি একটু বেশি, পজিটিভলি।
উনি লিখেছে, "ভগবানকে সন্তুষ্ট করতে হলে নিজের খারাপ দিক গুলোর বলি দিন, পাঁঠা বলি কেন? যেমন আপনি ভগবানের সন্তান তেমনি ওরাও। একজন মা কি কখনো তাঁর সন্তানের বলি চায়? আপনার মা কি চাইবে নির্মমভাবে আপনার গলা কেটে ফেলা হোক? কুসংস্কার বর্জন করুন। ভগবানের নামে নিরীহ প্রাণীগুলোর জীবন নিয়ে কোনো ভগবানকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়, এটা বুঝতে শিখুন। খাতায় কলমে শিক্ষিত হয়ে অশিক্ষিতের পরিচয় দেবেন না।"
লেখাটা পড়ে খানিকটা মন ভালো হল আমার, শ্রদ্ধা হল এমন এক শক্তিশালী কমপ্লিমেন্ট এর জন্য। আমার উত্তর কমেন্ট এ লিখলাম "ঠিক বলেছেন, এসব সব মানবতার, প্রকৃতিবাদ, কিংবা Anthropocene নামে সৃষ্টির সামগ্রিকতায় কেলেঙ্কারি।" যাই হোক, এই বলি প্রসঙ্গে আমার একটা শ্লোকের উধৃতি মনে পড়ে গেল: “ছাগলাঃ শরভাশ্চৈব নরশ্চৈব যথাক্রমাং/ বলিমহাবলিরিতিবলয়ঃ পৰিকীৰ্ত্তিকা।।" অর্থাৎ ছাগল ছাড়া অন্যান্য প্রাণীও বলির যোগ্য, এমনকি মানুষও। এখন প্রশ্ন হল আজকের সভ্য সমাজ মানুষ বলি কিভাবে স্বীকার করবে! মানুষ ব্যতিরেকে তবুও হত্যা হবে? কিভাবে? তাহলে হত্যা কেন?"
পুরাণের জ্ঞান অনুযায়ী আমাদের সমাজ তথা সনাতন ধর্ম দুই ভাগে বিভক্ত। এক বলির সমর্থন, অন্য ঘোর বিরোধী। এখানে দুই পক্ষই নিজের নিজের পুরাণ জ্ঞানের যুক্তিতে সমর্থন ও বিরোধিতা করে আসছে। যদিও শুনেছি সৃষ্টির আদিতে স্বয়ং মহেশ্বরের নির্দেশ মত ব্রাহ্মদেব দেবীর উদ্যেশ্যে পূজা করেন। আর সেই পূজায় সর্ব প্রথম "বলি" অর্ঘ্য হিসেবে দান করেন নিজের রক্ত। যাইহোক সেই বলির ব্যুৎপত্তিগত অর্থে গেলামনা। এই ইস্যুটিকে একটু অন্যভাবে একটু আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাক।
আসলে, আজ, "বলি"- এর অর্থ ঈশ্বরের নামে এক সামাজিক আত্ম ভূরিভোজ মাত্র বলা যেতে পারে, যেখানে কেবল মানুষই সর্বেসর্বা- অবশ্যই হিংস্রতার পরিচয়ে। আর ভগবান শুধুই এক অদৃশ্য জনপ্রিয় বিশ্বাস, তাই ভগবানের নামে হিংস্রতার প্রচার ও অনুশীলন একটা স্বাভাবিক প্রথা হয়ে উঠেছে, আবার কেউ কেউ গর্ব করে একে ঐতিহ্য বা ট্র্যাডিশন বলে, যদিও ট্র্যাডিশন পরিবর্তনশীল। আমি দেখেছি এই মানুষ নামক প্রাণীটি বিভিন্ন ধর্ম আলোচনায় গর্ব করে বলে জীবে প্রেম কর, জীবই ঈশ্বর, আবার সেই মানুষটিই হত্যা/ বলি নামক অপকর্মকে মনে করে ঈশ্বর সেবা। এটা গভীরভাবে ভাবার একটা বিষয়। আমি শুধু ভাবি, চিন্তিত হই এই দু-মুখধারী মানুষগুলোর ভগবান কে ভেবে। জীব এর অর্থ কি? কোথায় ভগবান? বলির(sentient) রক্তে, নাকি মৃত্যু যন্ত্রনায় চিৎকার করা ওই প্রাণীটির দু চোখে? এখানেই মানুষের মনুষ্যত্বের সংজ্ঞায় বিস্তর গলযোগ। নিষ্পাপ বিশ্বাসের মূলে গুরতর রোগের সংস্পর্শ।
অবশ্যই অমি ভগবানকে বিশ্বাস করি, ধর্মকে সম্মান করি, কিন্তু কাউকে* হত্যা করে নয়।
ধর্মের সঙ্গে ট্র্যাডিশন কে গুলিয়ে ফেলে মানুষ ক্রাইমকে নর্মালাইজ করে আসছে অনেক সময় আগে থেকে। কিন্তু, ধর্মের দোহাই ছাড়াও, এই একবিংশ শতাব্দীতে এই নর্মালাইজেশন তথা কথিত শিক্ষিত সমাজে* উর্ধ্বে চলমান, কেন? Is this for survival, we do kill animals? না মোটেও না, সে পর্ব চুকে গেছে। এই শতাব্দীতে মানুষ আর জীবিকার জন্য ক্ষুধার্ত পেটে স্বীকার করেনা। বরং এই পোস্ট মডার্ন যুগে সব কিছুর substitute সব কিছুতেই হয়ে পড়েছে। তাহলে এই criminal normalisation এর কারণ? অবশ্যই, এর মূল কারণ হল আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও ঔদ্ধত্য লিপ্সা; প্রকৃতির খাদ্য শৃঙ্খলের প্রতি ignorance, যেখানে We are the victims of pseudo-human instincts; সেকুলার শিক্ষায় একদিকে আমাদের সচেতন করা হচ্ছে nature degradation সম্পর্কে, অন্যদিকে সব কিছু আত্মসাৎ করার ইন্ধন পাচ্ছি আমাদের গলযোগ ট্র্যাডিশন ও সেক্যুলার* শিক্ষার অধিকাংশ আদর্শ থেকে, যে শিক্ষায় মানুষ মুলে, মানুষই সর্বেসর্বা- যেখানে নিরীহ মানুষের চিৎকার আছে, নিরীহ প্রাণীর আর্তনাদ নেই।
যে কোনো হত্যা, বলি, কিংবা suppression হল ক্রাইম যা ধার্মিক ক্রিয়াকান্ডেই হোক আর দৈনিক খাদ্যাভাসেই হোক, কিন্তু এই ক্রাইম এর সংজ্ঞা কেবল সীমিত মানুষের আত্ম কেন্দ্রিক বিচারের ক্ষেত্রে, কেবল মানুষের কল্যাণমূলক সংবিধানের। এখানে নিরীহ, দূর্বল প্রাণীদের অধিকার নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেনি কখনো, কখনো করবেও না। যারা করেছে বা করবে তাদের এই শিক্ষিত সমাজ বলবে whimsical কিংবা বাতিকগ্রস্ত। কারণ মানুষ আজ তার নিরীহ, দূর্বল প্রাণীদের প্রতি হিংস্রতার অধিকারকে এক অভ্যাসে পরিণত করেছে, বিশেষ করে এটি আজ শিক্ষিত সমাজের একটি উৎকৃষ্ট খাদ্যাভ্যাস। সুতরাং, আজকের শিক্ষার সঙ্গে ধংসের আর হিংস্রতার যোগ আছে প্রচুর, এখানে মনুষ্যত্ব, জীবে প্রেম, পৃথিবীর কল্যাণের সঙ্গে এর সম্পর্ক নিতান্ত বিরল, কিংবা নেই, থাকলেও সেল্ফ ক্রিটিক্যাল, এন্ডিং-এ কনফিউজনিজম, consumerism.
এক কথায় আমাদের সমাজ নামক এই সংগঠনে প্রেম, দয়া, অধিকার সব মানুষ নামক প্রাণীর উন্নতি কিংবা আরাম, সুখ সংশোধনে নির্ধারিত, যেটা না মানব জাতি, না এই পৃথিবীর পক্ষে সঠিক স্বাস্থ্যকর সবাই সেটা জানি, আমরা জানি (শিক্ষিত মানুষেরা), কিন্তু ক্রাইম ত্যাগ স্বীকারে অনিচ্ছুক, বাঁচার জন্য খাদ্য গ্রহণে অনিচ্ছুক, বরং খাদ্যের জন্য বাঁচতে, নিরীহ মাংসের লোভ ত্যাগে অনিচ্ছুক। শুধু চালিয়ে যাচ্ছি এভাবে, চলবে আরও কিছু দশক দশক*; হয়ত নির্বিঘ্নে অস্থিরভাবে, যতক্ষন না আমাদের ব্যক্তিগত খাদ্যাভ্যাস ও ধর্মের সংজ্ঞায় ট্র্যাডিশন-এর কিছু অভ্যাস পরিবর্তন হয়।
তাহলে কোনো উপায়? হতে পারে। এটা বাস্তব, যে আমাদের খাদ্যাভ্যাস অবশ্যই আমাদের ট্র্যাডিশন, কালচার, ও দৈনিক জীবন নির্বাহের সঙ্গে যুক্ত, তাই হুট করে একে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এখানে প্রয়োজন ইন্ডিভিজুয়াল আত্ম উপলব্ধি- মনুষ্যত্ব ও জীব প্রেমের সঠিক সংজ্ঞা, সর্বোপরি পরিবেশ, ভগবান ও অস্তিত্ব-এর অবস্থান অনুভব। প্রকৃত ঈশ্বর-ভগবান ব্যক্তির স্বাধীন সঠিক চিন্তার রূপ, ধর্মের বিভিন্ন নামের উর্ধ্বে। তাই ভবিষ্যত প্রজন্মে ভগবান ও মনুষ্যত্বের সংজ্ঞা কি হবে তা নির্ধারণ করবে আপনার আমার আত্ম উপলব্ধি ও মনুষ্যত্বের সঠিক অনুশীলন, প্রকৃত প্রকৃতি সচেতনতার শিক্ষা। সুতরাং, "let's think of an entire existence differently, cooperatively, and truthfully with our hearts."
আশার আলো:
কিছু প্রকৃত সচেতনতার আন্দোলন চলছে বিশ্ব জুড়ে, ভারতেও, যেমন, Vegan Revolution, Plant Based Life, Vegetarianism India ইত্যাদি।
#Hail_Voice_for_the_voiceless
#Hail_Conscience_for_sentient
#Hail_Right_for_life
#Hail_Cure_for_the_Mother_Nature
#mystic_purist

No comments:
Post a Comment