The Poet's Pen 20s Logo

Saturday, November 28, 2020

প্রাচীর

 ~তাপস সরকার



আজ একই নেই

বেওয়ারিশ ভাঙ্গা ইটের ওই প্রাচীর

কোনোদিন প্রশ্নও করা হয়নি 

কেন গাঁথা হয়েছিল 

কেবল বারবার মনে হয়েছে 

কি জীবন্ত ওই প্রাচীর 

মাঝে মাঝেই ওপারের শত্রু হাওয়ার বিপরীত হয় 

পাহারা দেয় নিঃশুল্ক 

কবছরে দুর্বল ইটগুলি খসে পরেছে 

লাল রঙের মাটি হয়ে 

কিছু জায়গায় সবুজের যে চিহ্ন 

তা নিয়েই স্তূপাকারে আজ দাড়িয়ে 

তার ফাঁকফোকরে পঁচিশ বছরে দেখেছি 

পঁচিশ লক্ষ পৃথিবীর শ্যাওলা থানকুনি পেয়ারা আর বট 

তাদের মধ্যে কেউ কেউ আজও বেঁচে আছে 

বেঁচে আছে প্রাচীরের এপারে 

আমার সবুজ প্রকৃতির সম্ভব পৃথিবী 

যেখানে নতুন নতুন অঙ্কুরে 

উন্মাদভাবে ঘন হয়ে ওঠে জঙ্গল 

সেই জঙ্গলে খুব ভোরে কিছু ফুল ফোটে 

তাদের গন্ধ শুঁকে প্রেমে পরা যায় 

নাম জানা যায়না  

কিছু ফুল সন্ধ্যায় ঝরে পড়ে 

তাদের কাহিনী স্মৃতি হয়ে যায় 

মুছে ফেলা যায়না 

প্রাচীরের ওপারে কিছু সাদা ফুলের আন্দোলন 

তবে সবুজ গাছের নয় 

লাল পাতা কালো গাছের এক অদ্ভুত সমন্বয় 

ওপারের জঙ্গল আরও গভীর 

শুধু মানরেখা এই প্রাচীর থেকে ঠাওর করা যায় 

এরই মাঝে কারোর স্মৃতির বিস্মরণ ঘটলে 

সেটা পাগলামি নয় 

বরং প্রকৃতি অস্বাভাবিক এক স্বাভাবিক জীবন 

আর বেওয়ারিশ ভাঙ্গা ইটের এই প্রাচীরও 

একদিন বিস্মৃতি হবে 

সব ইট এক সময় খসে পরবে 

লাল রঙের মাটি হয়ে 

সেই মাটির ওপরে জন্ম নেবে 

শ্যাওলা থানকুনি পেয়ারা বট স্থায়ীভাবে 

আবার স্মৃতি হয়ে 



Sunday, November 15, 2020

টুপি

  ~তাপস সরকার






তোমার টুপি পরার অভ্যাসে আমার অসুবিধে নেই

টুপি পরানোর অভ্যাসে ঘোর আপত্তি তাই,

তুমি টুপি হাতে বাক স্বাধীনতায় চিৎকার কর আমার তাতে অস্বস্তি নেই 

তোমার টুপি আমার মাথায় এলে তোমার বক্ অধীনতা বিপত্তি কই, 

যখন তুমি টুপি হাতে স্বাধীনতার কথা বল 

আমি আমার কানে কুলুপ দিই,

কারণ তোমার টুপি তোমারই স্বাধীনতা

আমি আমার টুপিতেই স্বাধীনতা খুঁজে পাই। 


প্রকৃতির দান আনন্দ

~তাপস সরকার




  শিশিরের মতো বৃষ্টি পরছে 

ফড়িং এর দল ডানা মেলে ভিজছে  

এই দিনটি আনন্দের দিন 

কান পেতে শুনলাম।

ডানা ভেজা হাস তার ডাক ডাকছে

বুঝলাম তারাও বৃষ্টির আনন্দ নিচ্ছে। 

জানলার ওপারে বাঁশবন, কাঠাল, আম, নারকেল তাল 

সবাই আমেজে নাচছে, 

ওরা সুখী, অনুভব করলাম। 

মেঘ রূপি ইন্দ্রের মাথা নত 

তার বজ্রপাতে পৃথিবীর নৃত্তের জোগাড় 

দেখি বৃষ্টি ভেজা টুনটুনি ডানা মেলে নাচে,

আমি দেখি আমার মন অস্থির 

ভেজা মাটির গন্ধে ক্ষুধা আমার হরতালে, 

আমি গন্ধ পেলাম সুখের, আনন্দের।

এভাবে খুঁজে পেলাম প্রকৃতির দান আনন্দ।।




 

Friday, November 6, 2020

লড়াই (Larai/Fight)

~তাপস সরকার




যারা আমরা বলি ভালো মানুষের ধর্মের প্রয়োজন নেই

আসলে তারা আমরা মানুষের ধর্মে পরিচিত নই,

যারা আমরা বলি ধর্ম ছাড়া আর কোনো গতি নেই

আসলে তারা আমরা ধর্মের গুন আর প্রসারে অবগত নই,

যারা আমরা বলি আমরা শরীরের বিবর্তন, ভগবান বলে কিছু নেই

আসলে তারা আমরা জ্ঞানের সূত্রে বিশ্বাসী কিংবা আগামী শিক্ষায় এগিয়ে নেই,

যারা আমরা বলি সৃষ্টির মূলে কেবল ভগবান, বিজ্ঞান কিংবা জ্ঞান নেই

আসলে তারা আমরা ভগবান দেখিনি, সৃষ্টির অস্তিত্বে বিশ্বাসী নই, 

যারা আমরা বলি রাজনীতিটা ঘৃণ্য, সমাজের নিয়মে অবদান নেই

আসলে তারা আমরা রাজা দেখিনি, নীতির শিখনে সামাজিক নই,

যারা আমরা বলি নীতি শিখে কি হবে? খাদ্য চাই নীতি নয়

আসলে তারা আমরা খেতে শিখেছি খাওয়াতে নই,

যারা আমরা বলি ক্ষুধাটা প্রধান, না, ধর্ম, রাজা, নীতি নয়

আসলে তারা আমরা খেতে শিখিনি, বাঁচতে আগ্রহী নই।

আজ শুরু হোক বাঁচার লড়াই, শুধু ক্ষুধা মেটানো নয়-

এ লড়াই হোক, খাদ্য, ধর্ম, রাজা, নীতি ও মনুষ্যত্বের, কেবল মানুষের নয়।

সংগ্রামটা এবার ভালো করে হোক।।


Wednesday, November 4, 2020

ভালো মানুষ (Valo Manush)

~তাপস সরকার



ওরা তোমায় তোমায় চেনে, 

না, তোমার সত্য কথা বলার অভ্যাসে নয়,

ওরা তোমায় ভালোবাসে 

তোমার চাকরি কিংবা টাকায় চরিত্র আছে তাই,

ওরা তোমায় কাছে ডাকে, 

না, তোমার সমাজে বেঁচে থাকার গল্পগুলো শুনতে নয়,

ওরা তোমায় কাছে ডাকে 

তোমার বাবার কাকাতো ভাইয়ের পিসি কিংবা জেঠু মন্ত্রী হয়ে তাই,

ওরা তোমার গুণগান করে,

না, তোমার ওই পাইকারী দরে বিক্রি সহজ পোশাকে নয়,

ওরা তোমার গুণগান গায়

তোমার শরীরে ব্র্যান্ডেড শার্ট কিংবা চুলের রংটা একটু আলাদা তাই,

ওরা তোমায় মানুষ মানে,

না, তুমি একটু সহজ আর ভালো মানুষ বলে নয়,

ওরা তোমায় মানুষ জানে,

তুমি একটু অসভ্য আর অমানুষ হলে তাই, 

এমনিতে ওরা অনেক কিছু জানে, 

না, শুধু তোমাকে আর আমাকে জেনে নয়,

ওরা অনেক কিছু জানে 

তাই অজানার বিতর্কে তর্ক না খুঁজে ওদের মত ভালো মানুষ খুঁজে যায়।



Monday, November 2, 2020

সমাপ্তি ! (SAMAPTI/ The End)


(ছোট গল্প)

~তাপস সরকার


 

  এখনও ভোর হতে অনেক দেরি ৷ পুর্বদিকের আকাশে আলোর কোনো বিন্দু নেই। আর শেষ রাতের তারাগুলিও নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। বর্ষার ঝিঝিপোকাগুলি সবে তাদের ডাক থামিয়েছে ৷ আর কোথাথেকে একটা ঘন কালো মেঘ এসে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে চাঁদহীন অন্ধকার রাতটিকে ৷ সবদিকে শুধু অন্ধকার আর নিস্তবদ্ধতা। হঠাত এই সময় একটা প্রচন্ড মেঘের শব্দে ঘুম ভাঙ্গল রাজেশের৷ যেন এক বিস্ফোরিত আকাশ থেকে পরেই তার ঘুম ভেঙ্গেছে। অভেদ্য অন্ধকারে পাগলের মতো চারিদিকে তাকানোর চেষ্টা করে সে। তার শরীর দারুনভাবে দুর্বল, যেন অসার হাড়গুলি একে অপরের থেকে একেবারে আলাদা হয়ে আছে৷ রাজেশ অনুভব করে যে তার শরীর আর তার মনের গতিতে চলেনা৷ তবু অন্ধকারে সে হাতড়াতে থাকে, উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। আর সেই সময় একটা দারুণ ঠান্ডা বাতাস এসে তার ভেতরের নড়িভুড়িগুলিকে জমাট বাঁধিয়ে দিচ্ছে একটু একটু করে। যদিও এটি বর্ষাকাল, রাতের পরিবেশ একটু অন্য রকম হওয়ার কথা৷ রাজেশ বুঝে উঠতে পারছেনা তার বর্তমান পরিস্থিতি৷ সে কোথায়, কেন, কটা বাজে, সে কি একা?

 

  কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে রাজেশ। কিন্তু ব্যার্থ হয়৷ গুমোট অন্ধকারকে ভেদ করে সে তাকানোর চেষ্টা করে কিছুটা দূরে। আরও একটু দূরে। তাও পারছেনা সে। না, কোনো কিছুই চোখে পরছেনা তার৷ সামনে, পেছনে, সবদিকে সুধু অন্ধকার আর অন্ধকার৷ আর এই অন্ধকার তার চোখের নাকি বাইরের জগতের তা বোঝারও ক্ষমতা নেই তার৷ সে স্পর্শ করার চেষ্টা করে তার হাত, মুখ, পা ও শরীর। ব্যর্থ হয়। সবকিছুই যেন তার নাগালের বাইরে৷ সবার থেকে সে আজ অনেক দুরে, অনেক আলাদা। রাজেশ মনে করতে থাকে তার গতকাল, গতকাল ঘুমিয়ে পরা, ঘুমিয়ে পরার আগের মহূর্ত৷ ভীষন কষ্ট হয় তার। স্মৃতির যন্ত্রনায় ছটপট করতে থাকে। কোনো কিছুই ঠাওর করতে ষপারছে না ঠিকঠাক। যেন সব স্মৃতি মুছে গেছে তার৷ তারপর, অন্ধকার আর অন্ধকার।

 

 স্কিংকর্তব্যবিমুঢ় রাজেশ তার সক্রিয় অনুভূতিগুলি বিভ্রান্ত হয়ে পরছে বারবার। গাঢ় স্তব্ধতায় তার শরীর লুটিয়ে পরা স্ট্যাচুর মতো স্থির হয়ে রয়েছে। কেবল বিকলাঙ্গ স্নায়ুগুলি বিদ্যুতের স্পর্শ হাতড়ায় অন্ধের অনুরূপ। এভাবে একবার আকস্মিকভাবেই মনে পড়ে গেল রাজেশের। হ্যাঁ, গতকালেও সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল স্ত্রী সুমী ও মেয়ে সুশ্রীকে তারাতারি বাড়ি ফিরে আসার। বৃদ্ধা মাও বলেছিল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে। আর বলেছিল এক প্যাকেটে ধুপকাঠি কিনে আনতে। কিন্তু এখন সে কোথায়? সে কি বাড়ি ফিরেনি? নাকি বাড়িতেই? আর এই অন্ধকার? কেনইবা মেঘের গর্জন? ওহ! শুধু অন্ধকার, ঘন অন্ধকার।

 

  বাতাসের প্রত্যেকটি বালির কনা যেন বিষাক্ত তিরের মতো বিঁধছে তার শরীরে। স্বাসপ্রস্বাসে ভীষণ যন্ত্রনা। রাজেশ মনে করতে থাকে তার প্রতিশ্রুতি, মেয়ে সুশ্রীর মুখ। এইতো আজ সকালে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সুশ্রী একটি পেনসিল চেয়েছিল। হ্যাঁ, একটি পেনসিল চেয়েছিল তার সুশ্রী। তারপর? তারপর?  হঠাৎ তখনই আর একটা প্রচন্ড মেঘের গর্জন।এবার রাজেশের মনে পরে হ্যাঁ, কর্নজোরা পোলিং বুথে সে ডিউটি দিচ্ছিল। হ্যাঁ, সে ছিল একজন প্রিসাইডিং অফিসার। তারপর...? আবার ভুল হয়ে যায় তার, সন্ধ্যা, সকাল, এখন; সামনে, পেছনে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। কেউ কোথাও নেই। কেবল শূন্যতা। সে একা।

 

  উদ্বিগ্ন মস্তিষ্কে স্মরণ করতে করতে রাজেশ এবার দাঁড়িয়েছে কোনোরকমে। তার অনুভব করতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মন ও শরীরের সম্পর্ক, তার বাস্তবিকতা। ঠিক তখনই সে দেখে একটি তীব্র আলো উজ্জ্বল হয়ে ধীরে ধীরে বড়ো হচ্ছে। আর সেটি তার দিকেই ছুটে আসছে নির্বিসারে। কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে যায় রাজেশ। সে দেখে আলোটি; কাছে, আরো কাছে, হ্যাঁ তার দিকেই সরে আসছে। সব কিছুই ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে রাজেশের । কাল, আজ, এখন, রাত। সে ছিল একজন প্রিসাইডিং অফিসার  হঠাৎ তার মনে পরে, ভোট চলাকালীন কিছু লোক পোলিং বুথে এসে গন্ডোগোল বাধায়। তারা বুথের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেলে রাজেশ বাঁধা দেয়,  খানিকটা ধস্তাধস্তি হয়ে যায় তাদের সঙ্গে। বারবার তারা হুমকি দিতে থাকলেও রাজেশ কিছুতেই রাজি হয়নি একজন আদর্শ স্কুল শিক্ষক হিসেবে। হ্যাঁ, রাজেশ স্বচ্ছ রেখেছিল ভোটবাক্স। বাঁধা দিয়েছিল দুষ্কৃতীদের। বাঁচিয়েছিল গনতন্ত্র, ভোটাধীকার। কিন্তু তারপর? কি হয়েছিল তার? আর এই রাত? সে মনে করার চেষ্টা করে বারবার ভীষণভাবে। আবার ব্যর্থ হয়। আবার…আবার…আবারতারপরই সে দেখে যে আলোটি তার দিকে ছুটে আসছিল সেটি আরো বড় হয়ে গেছে, আরো তীব্র, আরো উজ্জ্বল। সে মনে করতে থাকে তারপর...তারপর...তারপর। একই প্রশ্ন আতঙ্কিত করে তুলছে তাকে কোথায় সে? সে কোথায়? সে কোথায়?  ঠিক এই সময় রাজেশ শুনতে পায় আর একটা কানফাটা আওয়াজ। সে আওয়াজ তার চেনা। একটা ইঞ্জিনের আওয়াজ। কোন ইঞ্জিন? কেন? কোথায়? রাজেশ দেখে আলোটি তার খুব কাছে, আর একটি বিশাল ইঞ্জিন। এক বিশাল শরীরের মেশিন। সেটার সামনেই সে দাঁড়িয়ে। এক্ষুনি তাকে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা মারবে। সে দ্রুত নিজেকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পা দুটি স্থির ও অচল। যেন মাটিতে শেকড় গেঁথে আছে চিরকালের জন্য। এ...ই ইঞ্জিনটি আঘাত করবে তাকে। কোনো পথ নেই। না নেই। রাজেশ চিৎকার করে ওঠে “হেল্প হেল্প হেল্প”। কিন্তু কোনো শব্দ নেই ইঞ্জিনের বিকট গোঙ্গানি ছাড়া। সবদিকে কেবল সেটারই প্রতিধ্বনি। আবার চিৎকার করে রাজেশ “হেল্প হেল্প...”, কেউ শুনছেনা তার চিৎকার। সে লুটিয়ে পরে রেললাইনের ধাড়ালো পাথরগুলির ওপরআর ততক্ষণে কামরাগুলি গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে তাকে প্রত্যাখান করে চলে যাচ্ছে হুইশেল দিতে দিতে। সে যেন এক প্রবল ঝড়ের স্রোত একটু একটু করে চিন্তা শক্তি লোপ পাচ্ছে তার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে, আর অনুভব করে হৃৎস্পন্দনের অনুপস্থিতিগোটা শরীর ভেঁজা, তার সঙ্গে একটা গন্ধ অনুভব করে সে যেন মরচে পরা লোহা, লোহীত, নাকি রক্ত! নাকি "মৃত্যু"! রাজেশের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠেমৃত্যু, অন্ধকার, আলো, গর্জন, রেললাইন, কাল, আজ কোনোটাই সে বুঝতে পারছে না। এভাবে কিছুক্ষণ চুপ করে যায় সে। ভীষণ ক্লান্ত।

 

  হ্যাঁ, বারিতেই ফিরতে চেয়েছিল রাজেশ মনে পরে তার তখন রাত আটটা, ভোট শেষ হলে সে পোলিং বুথ থেকে রওনা দেয় বাড়ির দিকে। একটা পেনসিলও কিনেছিল মেয়ে সুশ্রীর জন্য স্পষ্টভাবে মনে পরছে তারকিন্তু ধীরে ধীরে স্পষ্ট ছবিগুলি আবার অস্পষ্ট হতে থাকে, তখনই সে দেখে আর একটি আলো, আর একটি ট্রেন ছুটে আসছে তার দিকে। রাজেশ এবার কোনোককমে সরে দাঁড়ায় রেললাইনের একটু দুরেসে দেখে ইঞ্জিনের তীব্র আলোটির ফোকাস পরেছে রেললাইনে, আর চকচক করছে ইস্পাত দুটি। সেই ইস্পাত দুটির মাঝখানে সে নিদ্রাচ্ছন্ন ছিল এতক্ষণ! এদিকে রেলগাড়িটি প্রায় দুশো গজের মধ্যে, তার তীব্র হেডলিইটের আলোয় ভীষন দ্রুত উজ্জ্বল হয়ে উঠছে ইস্পাত দুটি। আরো পরিষ্কার হয়ে উঠছে রাজেশের সামনের দিকটা। সে তাকাতে থাকে দুরে চকচকে ইস্পাত দুটিআর কিছু মুহূর্তেই সে দেখে অদুরে একটা মানুষ চিৎ হয়ে পরে আছে রেললাইনের মাঝখানে। সে চিৎকার করে ওঠে “কে ওখানে?”  কিন্তু কোনো উত্তর নেইরাজেশ আর একবার চিৎকার করে ডাকে “কে, কে ওখানে...?” কোনো সারা নেই। কোনো উত্তর না পেয়ে ছুটে যায় তার দিকে। কাছে যেতেই রাজেশ দেখে লোকটির মুখ থেতলানো, রক্তাক্ত। শনাক্ত করা কঠিন। একটি হাত ও পা অদ্ভুতভাবে বেঁকে রয়েছে। এদিকে ট্রেনটিও ছুটে আসছে দ্রুত গতীতে। আরও স্পষ্ট দেখাচ্ছে লোকটির রক্তাক্ত শরীর। হঠাৎ সে লক্ষ্য করে একি! এতো তারই শার্ট, একই পেন্ট সে পেরেছিল সকালবেলাওইতো একটি পা তারই স্যান্ডেল পরে আছে। আর তার পার্স...? রাজেশ হাতড়াতে থাকে তার শূন্য পকেট। কোথায় তার পার্স? তাহলে, তাহলে...! হঠাৎ তখনই তার পাশ দিয়ে ট্রেনটি দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে বিষ্ময়ে কাঁপতে থাকে রাজেশ। তার শরীর এবার বাতাসের থেকে আরো হালকা হতে থাকে আর ভেসে যেতে থাকে একই সঙ্গে। ধীরে ধীরে সে মিশে যেতে থাকে ঘন অন্ধকারের দিকে ম্লান থেকে ম্লানতররাজেশ অস্পষ্ট গলায় চিৎকার করে ডাকতে থাকে “মা, মা আমি বাড়ি যাবো-তোমার ধুপকাঠি...সুমি, সুশ্রী...তোমার পেনসিল”

 

প্রেমাচার


~তাপস সরকার




প্রেমবর্ষণে শীতল প্রান স্নিগ্ধ এ নীড়_
ওগো, তুমি আজ খুব কাছে--ঘুচেছে তিমির,
নরম ঘাসে নরম পায়ে হাটছি দুজন_
গোলাপী হাওয়ায় মেতেছি আজ নীরব দুটি মন,
আমরা আজ খুব কাছে নরম গ্রহণের উত্তালে
হয়তো, গোলাপ ফুটলে লজ্জা পেত আমাদের আচরণে,
ভীষণ সুখে আছি আজ_কিছুটা ব্যবধান
চতুস্পদ-এ হাঁটছি মোরা যেন একটাই প্রান,
এভাবে, লজ্জাভরে ডান হাতটি ধরে করলে আলিঙ্গন
দুটি নয়ন আজ স্থির_এযেন মহার্য চুম্বন,
ধীরে ধীরে আরো কাছে এলে সব লজ্জাভিমান ভুলে
আমি আজ সুখি,আমার স্কন্ধে তোমার শীর খোলা চুলে,
শ্বাস-প্রশ্বাস যেন চলেনা আর বন্ধ হৃদ্স্পন্দন_
ধন্য এ পৃথীবি ও ব্যাকুল প্রেমের নির্লজ্জ চয়ন,
ফিরবোনা আজ ঘরে আমরা যদিও সন্দ্যা হয়
একই সুরে বাধব ঘর দেখাকনা কেউ ভয়;
তুমি প্রশ্ন করলে, "তুমি আমায় ভালোবেশেছো কবে?"
আমি বললাম,সেই শৈশবে, প্রথম দেখেছি যবে,
তুমি বললে, "তুমি খুব বোকা"
আর আমি বললাম, তাই হতে ভালো লাগে;
এভাবে কেটে গেল খানিক্ষন,অনেক সময়_
অচেনা সুখে তুমি উন্মাদ আর আমার রাজ্যজয়,
তোমার সুগন্ধে আমি মত্ত, নিস্তেজ হয়ে পরি
এরই মাঝে সুখের আনন্দ পিরিতের ছড়াছড়ি,
ভাবছি আমি নতুন সুগন্ধ, নতুন ফুলের কুড়ি_
হঠাৎ তুমি বলে উঠলে-"গোলাপ গেছে চুরি;"

আসলে স্বপ্ন ভাঙ্গল রবীর গানে_
তাই ফিরে এলাম অবিলম্বের পানে;
আর এটাই জীবন ছন্দ;
কবির গান বেজে চলে__
"যে ছিল আমার স্বপনচারিণী
তারে বুঝিতে পারিনি
দিন চলে গেছে খুজিতে খুজিতে!!
শুভক্ষনে কাছে ডাকিলে,
লজ্জা আমার ঢাকিলে গো,
তোমারে সহজে পেরেছি বুঝিতে!!...........!! "




Sunday, November 1, 2020

Today's Morning: An Unstable Thought

~Tapas Sarkar




Like an other morning I woke up today but not with indulgence of any dream, rather naturally. This morning is in a way different, little hopeful and bright. Almost every morning I wake up early, arrange my bed, sweep my room, take my brush, get utensil cleaned and finally sit on my tool chair setting on the Zee news on my phone accordingly to my routine, and the tea cup remains untouched until it gradually gets cold. This morning I was watching Zee news too but I could not keep watching for a long as usal I do. I suddenly switched off the news and left the phone on bed. I was sitting unspoken, so silent and cogent. Keeping my phone aside I was thinking, I was thinking blank. The thinking was too subtle to understand what actually I was thinking. Then a feeling of conversation hit my heart but I was fearing to speak to someone lest I miss those sounds outside. Though I was not sure how beautiful or sweet those vibrations were. I closed my eyes. Cricket sounds I heard first but I could not discern where those sounds were coming from, whether from my own room or from outside. Then my ear grasped a sound of tailorbird chirping repeatedly outside my window. I looked outside and noticed a cuckoo flying away cooing thrice. I kept thinking. I kept thinking not conceiving what actually I was thinking. I kept mum. I heard a new born heifer crying from someone's house as it's mother is tied somewhere far away. I heard playing voice of some happy children. I kept thinking. I heard neighbors talk of some morning works, I heard them clearly. I kept thinking. Still I could not perceive what actually I was thinking. I did even not try. I just kept thinking blankly as far as I could. There was no way to leave this process as there was no any interest and intension to avoid this. The process of thinking was felt strong, unavoidable till the strong struck of the wall clock hit my ears second time and second time. The crunching hits of the tubewell pump blew in my ear for third time and the grunting sound of a passing by motorcycle for fourth time collapsed on my head. Now something different happened, I woke up again. I stopped thinking in late speed and turned my head when my mom called me to have a cup of tea. I sat off the tool and took the tea. Mama approached her love saying "Do You Want Muri (fried rice)?" I humbly answered "Yes Ma."

 

This is the first morning I am taking warm tea, and watching news again, hearing the crickets, tailorbirds, cuckoo and the heifer. The children who are outside playing happily, to them I can relate my childhood yet vividly. The neighbors who are talking so living and real, with them I can remember our yesterday conversations. And here, this morning, a soft taste of a marie biscuit I eager to bite. This is too much anxious to sip warm tea  so pleasantly and consciously, and I am thankful, I am grateful to all those sounds and vibrations.