The Poet's Pen 20s Logo

Sunday, August 15, 2021

স্বদেশ প্রেম

 (Essay)

~তাপস সরকার


  আজ পঁচাত্তরতম স্বাধীণতা দিবস। সকল ভারতবাসীর আজ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর দিন। নিঃসন্দেহে এই দিনটির অপেক্ষায় উদ্বিগ্ন হয়ে আমরা সবাই চেয়ে থাকি উজ্জাপনের এক চরম আনন্দে। বিশেষ করে আমাদের বীর সৈনিকরা যারা সীমান্তের পাহাড়, নদী আর জঙ্গলে দুঃসাহসী সংগ্রাম করে চলেছে তাদের আনন্দে বুকে সাহস আর স্বদেশ প্রেমের বোধটা তীব্র হয়ে ওঠে। হয়তো ওরা না থাকলে স্বদেশ নামক স্বাদটা জানা কঠিন ছিল। আজকের ইতিহাসের প্রত্যেকটি পৃষ্ঠা ওদের আত্ম বলিদানের রক্তে ভেজা না থাকলেও স্পষ্ট গন্ধ পাওয়া যায়, সংগ্রামী হৃদয়ে শোনার শক্তি থাকলে শুনা যায় ওদের ১৯৪৭ কিংবা তার পূর্বের যুদ্ধ কালীন কথোপকথন। তাই, সর্বপ্রথম, স্বাধিনতার সহস্র শ্রদ্ধাঞ্জলি আমাদের জন্মভূমি মায়ের বীর সন্তানদের। একইভাবে সর্ব শক্তিমানের কাছে প্রার্থনা প্রত্যেক ভারতবাসীর স্বাধীন চিন্তা ধারায় স্বাধীন ও শ্রেষ্ঠ ভারতের রূপ যেন সঞ্চিত থাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন হোক প্রতিবছরের প্রত্যেকে মুহূর্তে প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিত্বে। 


    তবে ১৫ই আগস্ট কেবল পতাকা উত্তোলন আর সঙ্গীত বাজিয়ে নয়, এই স্বাধীনতার আনন্দ অনুভূত হোক প্রত্যেক হৃদয়ের স্পন্দনে, যে স্পন্দন কখনো বন্ধ হবার নয়। স্বাধীনভাবে বাচার অধিকার স্বাধীন চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে সমৃদ্ধ হোক। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই সুশীল চরিত্রের সমাজ গঠনে, যে সমাজ আমাদের দেশকে চালিত করবে তার শ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণে। কেবল ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা আমাদের সমাপ্ত সংগ্রাম নয়, কারণ আজও আমরা স্বাধীন হতে পারিনি অনেক পরাধীনতা থেকে, কুসংস্কার, কুশাসন ও কু-অভ্যাস থেকে। তাই এই স্বাধীনতার সংগ্রাম চলতে থাকবে অনর্গল আমাদের ব্যক্তিগত পরিসর থেকে সামগ্রিক এর দিকে। ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা নেব সংগ্রাম মনুষ্যত্ব স্বাধীনতার, ঘৃণা-হিংসা নয়। বীর পুরুষদের প্রেরণায় আমরা এক লক্ষ্যে কেন্দ্রিভুত হব মানব ধর্ম রক্ষায়, তবেই ভারতীয় হয়ে আবার গর্ববোধ করতে পারব। একসঙ্গে গর্জে বলতে পারব, 'We are Bharatiya (Indian), the entire world is our home'.


  সর্বপরি, দেশের নাগরিক হিসেবে এখন আমাদের ন্যূনতম কর্তব্য, স্বাধীনতার ঐতিহাসিক তত্ত্ব উদঘাটন অপেক্ষা আত্ম মনন ও পার্শবর্তী মানব ধর্মের সংকট মোচনে, অল্প হলেও ক্ষুদ্র আত্ম ত্যাগ স্বীকারে, আর সব কিছুর পর্যবেক্ষণে আমাদের এখনকার অবস্থান নির্ধারণে। কোন পরিস্থিতিতে আমার স্বাধীনতা, আমার স্বাধীনতার গণ্ডি কতদূর। এসব সাধারণ মৌলিক জ্ঞান থাকলেই পরবর্তী যুগের সংবিধানে স্বাধীনতার অর্থ কি হবে তার সঠিক আভাস পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে স্বাধীনতার আত্মকেন্দ্রিক সঙ্গার অবসান ঘটে সার্বিক, সনাতন স্বাধীণতার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।


     স্বামী বিবেকানন্দ এক সময় বলেছিলেন, Arise, awake and do not stop until the goal is reached. অর্থাৎ, জেগে ওঠে উদিত হও আর থেমো না সংগ্রাম যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাচ্ছ। আমি জানি স্বামীজির এই বাণী চিরন্তনভাবে ভারতবাসীর অন্তর্নিহিত সত্তাকে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপিত করে সংগ্রামী করে তোলে ভবিষ্যত নতুন ভারত নির্মাণে, আর আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে নতুন ভারত সংকলনের এক বৃহৎ লক্ষ্যে নিয়োজিত হয়েছি অজান্তে কিংবা সজ্ঞানের আন্দোলনে। এই নতুন ভারত শ্রেষ্ঠ স্বাধীন ভারত, যে ভারতে ভারতীয় আর ভারতের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই, বিভেদ নেই ভারত আর ভারত মাতার অর্থের তাৎপর্যের, না জাতির, না ধর্মের, না বর্ণের। যে ভারতে ক্যাপিটালিস্ট ও সোশ্যালিস্ট একই দৃষ্টির আলোকে ক্ষুধার্ত শিশুকে দেখে একটি প্রাণ হিসেবে, না অর্থ, না ক্ষমতার ভগ্ন মনুষ্যত্বে। যে ভারতবর্ষে এক সাধারণ নিঃস্ব, নিঃস্বার্থ, পরোপকারী পূজিত হয় ভগবানরূপে; প্রেম ও পারস্পরিক বোঝাপড়া যেখানে জীবন প্রবাহ, স্বদেশ ভূমি যেখানে মাতৃসম, ধর্ম যেখানে আত্মিক বিজ্ঞান, শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রেম- সেই নতুন শ্রেষ্ঠ স্বাধীন ভারত।





No comments:

Post a Comment